









দাম্পত্য জীবন যেভাবে মধুর হয়
(হযরত মাওলানা কাজী মু‘তাসিম বিল্লাহ রাহ.-এর মুহতারামা সহধর্মিণীর সাক্ষাৎকার)
প্রশ্ন:১
স্বামী-স্ত্রীর মধ্যকার সম্পর্ক কেমন হলে সংসারে সুখ-শান্তি প্রতিষ্ঠিত হতে পারে? দাম্পত্য জীবন হতে পারে মধুর!
■■ স্বামী-স্ত্রীর সম্পর্ক কীরূপ হওয়া উচিত, তোমরা কুরআন হাদীস পড়ে আমার চেয়ে ভালো জেনেছো। এ ক্ষেত্রে আমি যা বুঝি..
ক. স্বামী-স্ত্রী একে অপরের জন্য শোভাস্বরূপ। একে অপরের মুখাপেক্ষী। একান্তই মুখাপেক্ষী। এটা শুধু দৈহিক প্রয়োজন পূরণের জন্যেই নয়। সাহায্য-সহযোগিতার প্রয়োজনে স্ত্রী তার স্বামীর, আর স্বামী তার স্ত্রীর মুখাপেক্ষী হয়। স্বামী অসুস্থ হলে স্ত্রীর চেয়ে বেশী খেদমত কেউ করতে পারে না। তাই তো আশি বছরের বুড়োও স্ত্রী মারা গেলে আবার বিয়ে করতে চায়।
খ. স্বামীকে আনন্দিত ও প্রফুল্ল রাখার দায়িত্ব তার স্ত্রীর। স্বামী বেচারা বাহিরের কাজ করে ঘরে আসে স্ত্রীর কাছে প্রশান্তি লাভের জন্য। তাই প্রিয়তম স্বামীর মেজায বুঝে ঘরে প্রবেশের পুর্বেই স্ত্রী প্রয়োজনীয় সব প্রস্তুত করে রাখবে। ঘরের কোনো কাজ অসম্পূর্ণ না রাখা। যতক্ষণ স্বামী ঘরে থাকবেন, ছায়ার মতো তাকে সঙ্গ দেওয়া। যাবতীয় প্রয়োজনে এগিয়ে আসা।
গ. স্বামীকে ছাড়া একাকী বাপের বাড়িতে আনন্দ করতে অভ্যস্ত না হওয়া। আবার স্বামীর সুবিধা মতো চলে আসতে আপত্তি না তোলা। একান্তই মাতা-পিতাকে দেখতে মন চাইলে দু’জনেই যাবে। স্বামী ছাড়া স্ত্রীর আনন্দ তো পূর্ণ হওয়ার মতো নয়।
ঘ. স্বামীর ইশারায় কাজে অভ্যস্ত হওয়া। তাহলে স্বামীও মন উজাড় করে প্রিয়তমাকে মুহাব্বত করবে, ভালবাসবে। আসলে স্ত্রীর গুণেই সংসার সুখের হয়। অনেক সময় স্ত্রীই সংসার ধ্বংসের কারণ হয়।
ঙ. স্বামীর সম্পদে স্ত্রীর মিতব্যয়ী হওয়া উচিত। তার অনুমতি ছাড়া সম্পদে হাত না দেওয়া। পর্দার ব্যাপারে যত্নবান হওয়া।
চ. স্বামীর সাথে কথায় কথায় ঝগড়া করবে না। বর্তমান সময়ের বহু মেয়ে বড় নির্লজ্জ ও বেহায়া। স্বামীর সাথে কথায় কথায় ঝগড়া করে। মুখের উপর তর্ক করে। স্বামী রেগে কিছু বকা-ঝকা করলেও তো তার চুপ থাকা উচিত। মেজায ঠান্ডা হলে প্রকৃত ব্যাপারটি স্পষ্ট করবে।
আগেকার মহিলাগণ গরীব ও কম শিক্ষিত হলেও আদব কায়েদা যথেষ্ট ছিল। ঝগড়া-ফাসাদ তো দূরের কথা, প্রসঙ্গক্রমেও স্বামীর নাম ধরে ডাকতে ইতস্তত করত। নিরবে অশ্রু বিসর্জন দিতো, সহ্য করত কিন্তু স্বামীর নামে অভিযোগ করাই বুঝতো না। করার প্রয়োজনও মনে করতো না।
ছ. স্বামীর কাছে অযথা অথবা অসঙ্গত বাহানা না করা। এটা দাও, ওটা দাও। এখানে নিয়ে যাও, ঐখানে নিয়ে যাও ইত্যাদি বাহানা। এসব অসঙ্গত অবুঝের।
জ. অপরদিকে স্বামী স্ত্রীর প্রতি জুলুম করবে না। সুযোগ হলে, সম্ভব হলে স্ত্রীর সকল বৈধ আবদার পুরো করবে। কোনো পুরুষই অন্তর থেকে এটা চায় না যে, তার স্ত্রী-সন্তÍান কষ্ট করুক।
আলহামদু লিল্লাহ, তোমার হুযুরের সাথে আমার কখনো বড় ধরনের ঝগড়া-ফাসাদ হয়নি। সন্তানদের পড়া-লেখার বিষয়ে কখনো বকা-ঝকা করেছেন। তখন চোখ তুলে তাকানো তো দূরের কথা, সামনে দাঁড়ানোরই সাহস পেতাম না। তিনিও অত্যধিক মুহাব্বত করতেন। তাঁর আন্তরিক মুহাব্বত ও ভালবাসা আমাদের সংসারকে টিকিয়ে রেখেছে। নইলে এ সংসার করা আমার জন্য কষ্টের হয়ে যেত।
আমি ছিলাম আদরের দুলালি, ননির পুতুল। দালান-কোঠায় থেকেছি, গোশত- পোলাও খেয়েছি, আনন্দে-আহ্লাদে বেড়ে উঠেছি। ছাদহীন কুঁড়ে ঘরে থাকি কী করে? গোশত-পোলাও-এর পরিবর্তে ভাত-ভর্তাও জুটতো না অনেক সময়। সিদ্ধ কদু, তাই ভরতে হত জঠরে।
লোকটির হৃদয় ছিল মুহাব্বতে ভরপুর। দেহটি ছিল ইলমে ওহীর সাজে সজ্জিত। তার আখলাক-চরিত্রে আমি ছিলাম পূর্ণ মুগ্ধ। তাই দরিদ্রতার মাঝেও অনাবিল শান্তি অনুভব করেছি। আসলে স্ত্রীর জন্যে স্বামীর আদর সোহাগের মাঝেই রয়েছে একমাত্র প্রশান্তি। হযরত খাদিজাতুল কুবরা রা. অঢেল ধন-সম্পদের অধিকারী ছিলেন। স্বামী হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর আদর ¯স্নেহে ও তাঁর মুহাব্বত তাকে সম্পদের মায়া ছাড়তে বাধ্য করেছে।
(পাঠকগণের অবগতির জন্য বলছি, হুযুর সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের এই পবিত্র জীবন সঙ্গিনীর নামেই আমাদের আম্মাজানের নামটি।
নামের সাথে আখলাকেরও কী অপূর্ব মিল! বিয়ের পর আম্মাজানের শ্বশুর কাজী সাহেব হুযুর রাহ.-এর আব্বা, হুযুরকে বলেছিলেন তোমার জন্য আমি হুযুর সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের পবিত্র জীবন সঙ্গিনীর নামের গুণবতী জীবন সঙ্গিনী এনেছি। আমরাও কাজী সাহেব হুযুর রাহ.-এর থেকে বারবার এ কথা শুনেছি যে, আমার দ্বীনের খেদমতের ক্ষেত্রে তোমাদের আম্মাজানের অবদান অনস্বীকার্য। পিতার অঢেল ধন-সম্পদ স্বামীর হাতে দ্বীনের পথে ব্যয় করেছেন। দ্বীনের খেদমতে স্বামীকে সর্বাত্মক সহযোগিতা করেছেন। আজ আমার অন্তিমকালে তাদেরকে অসহায় অবস্থায় রেখে যাচ্ছি। মহান আল্লাহর হাতে সোপর্দ করে গেলাম। )
সাক্ষাৎকার গ্রহণ :
আব্দুল হালীম
মাসিক আল কাউসার থেকে নেওয়া।
লেখাটি অনেক লম্বা । আরো অনেক গুরুত্বপূর্ণ বিষয় এই লেখাটিতে উঠে এসেছে ইনশাআল্লাহ আস্তে আস্তে পুরা লেখাটি পোস্ট করব।